মিউচুয়াল ফান্ড
মিউচুয়াল শব্দটি হয়তো প্রায় সবাই শুনেছেন যারা facebook ব্যবহার করেন । তারা দেখবেন আপনার অনেকগুলো বন্ধু যদি, সবাই সবার বন্ধু হয়, তাহলে তখন তাদের Mutual friend বলে । Mutual শব্দের অর্থ যৌথ আর fund শব্দের অর্থ বিনিয়োগ অর্থাৎ মিউচুয়াল ফান্ড শব্দের অর্থ যৌথভাবে বিনিয়োগের মাধ্যম ।
![]() |
মিউচুয়াল ফান্ড কি |
মিউচুয়াল ফান্ড কি ?
সেই ম্যানেজার ওই ফান্ডের টাকাটি বিভিন্ন ফান্ড, শেয়ার ও অন্যান্য সম্পদে বিনিয়োগ করে লাভ করার চেষ্টা করেন। এরপর লাভ বা ক্ষতি হলে তা সবাই মিলে ভাগ করে নেয় ।
মিউচুয়াল ফান্ড কিভাবে কাজ করে ?
ধরুন আপনার 5 জন বন্ধু A, B, C, D, E মিলে পরিকল্পনা করলেন আপনারা প্রত্যেকে 10 হাজার টাকা করে দিয়ে মিউচুয়াল ফান্ড শুরু করবেন । আপনারা যৌথ ভাবে 50 হাজার টাকা দিয়ে মিউচুয়াল ফান্ড এ বিনিয়োগ করলেন ।
মিউচুয়াল ফান্ড এর ম্যানেজার বা বিশেষজ্ঞ আপনাদের 50 হাজার টাকাটা 5 টা ভিন্ন শেয়ার , ও বন্ড এ বিনিয়োগ করলেন ।
ধরি,
- SBI এর শেয়ার বিনিয়োগ করলেন 10হাজার টাকা
- TATA র শেয়ার বিনিয়োগ করলেন 10হাজার টাকা
- ICIC এর শেয়ার বিনিয়োগ করলেন 10হাজার টাকা
- AXIS এর শেয়ার বিনিয়োগ করলেন 10হাজার টাকা
- এবং একটি বন্ড এ বিনিয়োগ করলেন 10হাজার টাকা
বছর শেষে দেখা গেল
- SBI এর শেয়ারে লাভ হয়েছে
- TATA র শেয়ারে লাভ হয়েছে
- ICIC এর শেয়ারে ক্ষতি হয়েছে
- AXIS এর শেয়ারে লাভ হয়েছে
- বন্ড এ ক্ষতি হয়েছে
বছর শেষে সব মিলিয়ে দেখা গেলো 20% লাভ হয়েছে । তাদের মোট বিনিয়োগ ছিল 50হাজার টাকা এখন তা বেড়ে 60 হাজার টাকা হয়ে গেছে ।
অর্থাৎ তাদের প্রত্যেকে যে 10 হাজার টাকা করে দিয়েছিল তা বেড়ে এখন 12 হাজার টাকার হয়ে গেছে। সব সময় যে লাভ হবে সেটা কোন কথা না ক্ষতিও হতে পারে ।
অথবা আপনি যদি কোন কোম্পানির স্টক কিনতে চান, ধরুন আপনি MRF এর স্টক কিনতে চান, স্টকটির দাম 1লাখ টাকা হয়তো, আপনার কাছে এত টাকা নেই সে ক্ষেত্রেও মিউচুয়াল ফান্ড আপনাকে সাহায্য করবে ।
আপনার মত আরো 10 জন যদি MRF স্টক কিনতে আগ্রহী হয় তখন সবার কাছ থেকে 10 হাজার টাকা নিয়ে মোট 1লাখ টাকা দিয়ে MFR এর স্টক কিনে দেবে । সেই ক্ষেত্রে লাভ বা ক্ষতির হার সমান অংশে বিভক্ত হবে।
মিউচুয়াল ফান্ডের ইনভেস্ট করার দিক থেকে 2 ভাগ করা যায়।
1. SIP (systematic investment plan) নিয়মিত কিস্তির মাধ্যমে বিনিয়োগ:
এই পদ্ধতিতে আপনি মাসের নির্দিষ্ট সময় আপনার টাকা কিস্তির আকারে ( যেমন 500টাকা ,1000টাকা,2000টাকা) আপনার সামর্থ অনুযায়ী ইনভেস্টমেন্ট করতে পারবেন ।
2. LUMP SUM মাধ্যমে বিনিয়োগ :
একবারে সম্পূর্ণ টাকা দেবার পদ্ধতি ,এই পদ্ধতিতে আপনি একবারে একটা বড় পরিমাণ টাকা ( যেমন 5000 টাকা ,10,000 টাকা) আপনার সামর্থ অনুযায়ী একবারে ইনভেস্টমেন্ট করতে পারবেন।
মিউচুয়াল ফান্ড কত প্রকার ও কি কি
মিউচুয়াল ফান্ডকে প্রধানত তিনটি ভিত্তিতে ভাগ করা হয় 1.গঠনগত, 2.বিনিয়োগ গত 3.লক্ষ্য গতভাবে ।
![]() |
মিউচুয়াল ফান্ড কত প্রকার ও কি কি |
1. গঠনগত মিউচুয়াল ফান্ড (Structure Mutual Fund):
গঠনগত দিক থেকে মিউচুয়াল ফান্ড কে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায় ।
A. ওপেন-এন্ড ফান্ড (Open-End Fund) :
এই ফান্ডে বিনিয়োগকারীরা বছরের যেকোনো সময় ফান্ডে টাকা জমা বা তুলে নিতে পারেন । এটি সবথেকে সহজ ফান্ড যে কেউ ব্যবহার করতে পারে ।
B. ক্লোজ-এন্ড ফান্ড (Close-End Fund) :
এই ফান্ডটি নির্দিষ্ট সময় পর অর্থাৎ ম্যাচুরিটি হওয়ার পর তোলা যায়। অর্থাৎ ফান্ড টার মেয়াদ একবারে শেষ হলে ।
C. ইন্টারভাল ফান্ড (Interval Fund) :
এই ফান্ডটিতে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে টাকা তোলা বা বিনিয়োগ করা যায়। সবসময় টাকা তুলতে বা জমা দিতে পারবেন না ।
2. বিনিয়োগের ধরণ (Asset Class ) অনুযায়ী মিউচুয়াল ফান্ড:
বিনিয়োগের ধরন অনুযায়ী মিউচুয়াল ফান্ড কে তিন ভাগে ভাগ করা যায় ।
A. ইকুইটি ফান্ড (Equity Fund) :
এখানে মিউচুয়াল ফান্ডের । মাধ্যমে সরাসরি শেয়ারে বিনিয়োগ করে । এর এখানে বেশি লাভ পাবেন , কিন্তু ঝুঁকির পরিমাণটা অনেক বেশি ।
এর উল্লেখযোগ্য কিছু ফান্ড হলো
- Mid Cap(মিড ক্যাফ)
- Small Cap (স্মল ক্যাফ)
- Large Cap। (লার্চ ক্যাফ
- Index Fund। (ইনডেক্স ফান্ড)
B. ডেট ফান্ড (Debt Fund) :
সরকারি বন্ড বা ফিক্সড ইনকাম বিনিয়োগ করে। ফলে একটু ঝুঁকি পরিমাণ কম থাকে, এর জন্য লাভের পরিমাণটাও কম হয় ।
এর উল্লেখযোগ্য কিছু ফান্ড হলো
- গভমেন্ট সিকিউরিটি বন্ড
- কর্পোরেট বন্ড
- লিকুইড
C. ব্যালান্সড বা হাইব্রিড ফান্ড (Balanced/Hybrid Fund):
ইকুইটি ফান্ডের শেয়ার ও ডেট ফান্ডের বন্ড এর দুটোই ভারসাম্য রেখে বিনিয়োগ করে। ফলে ঝুঁকি ও লাভের হার মাঝামাঝি ।
3. লক্ষ্য অনুযায়ী মিউচুয়াল ফান্ড (Objective Fund ) :
A. গ্রোথ ফান্ড (Growth Fund) :
এটা দীর্ঘ মেয়াদী ফান্ড এটা যেমন সময় লাগে তেমন টাকাও অনেক পাওয়া যায় উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ব্যাংক এর ফিক্সট ডিপোজিট।
B. ইনকাম ফান্ড (Income Fund) :
এই ফান্ড টি করে রেগুলার ইনকামের জন্য।
C. ট্যাক্স-সেভিং ফান্ড (Tax Saving Fund / ELSS fund) :
ট্যাক্স ছাড়ের সুবিধা দেয় এটা সাধারণত ৩ বছরের লক-ইন পিরিয়ড থাকে , তারপর টাকা তোলা যায় ।
শেষকথা
আপনি আপনার সাধ্য মতো ইনভেস্ট করুন । লোকের কথা শুনে হুট যে কোনো কিছুতে ইনভেস্ট করবেন না । প্রথমে অল্প ইনভেস্ট করবেন তার পর আস্তে আস্তে অভিজ্ঞতা অর্জন করে বড় ইনভেস্ট করুন ।
যদি এই পোস্টটি পড়ে আপনার একটু উপকার হয়ে থাকে হয়ে থাকে , তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানান আরো এরকম পোস্ট করবেন আমাদের কে follow করতে পারেন। আর কি ধরনের বিষয় জানতে চান তা কমেন্টে জানান 🙏🙏
আরও পড়ুন
✎ শেয়ার মার্কেট কি সম্পূর্ণ আলোচনা 👉CLICK করুন |